সর্বশেষ আপটেড

যৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

মানবিক বিভাগ এইচএসসি ২০২২ শিক্ষাবর্ষের সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আজ তোমাদের সামনে এইচএসসি ২০২২ সপ্তম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর/ সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়েছে- যৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।

আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ সালের ৭ম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব, যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।

এইচএসসি ২০২২ সপ্তম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

HSC 7th Week Assignment 2022 Logic 2nd paper

অ্যাসাইনমেন্ট: যৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

ক. যৌক্তিক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রকৃতি।

খ. যৌক্তিক বিভাগের সংজ্ঞা।

গ. যৌক্তিক বিভাগের নিয়মাবলি।

ঘ. যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম লঙ্ঘনজনিত অনুপপত্তি।

এইচএসসি ২০২২ সপ্তম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর/ সমাধান

ক) যৌক্তিক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রকৃতিঃ

যৌক্তিক বিভাগের প্রকৃতি (লজিক্যাল বিভাগের প্রকৃতি) :

যুক্তিবিদগণ কর্তৃক প্রদত্ত উপর্যুক্ত সংজ্ঞাসমূহের ভিত্তিতে যৌক্তিক বিভাগের প্রকৃতিকে নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

১। যৌক্তিক বিভাগ কেবলমাত্র শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক পদের ক্ষেত্রেই সম্ভব, কোনো একক ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষেত্রে সম্ভব নয় । যেমন, বর্ণ অনুসারে ‘মানুষ’ শ্রেণিবাচক পদটিকে ‘শ্বেতকায়’ ও ‘অশ্বেতকায়’ এ দু’ভাগে বিভক্ত করা হলে তা হবে যৌক্তিক বিভাগ ।

২। যৌক্তিক বিভাগ হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়া। বৈচিত্র্যময় এ বিশ্বের যাবতীয় বিষয় একই সাথে জানা বা মনে রাখা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে যৌক্তিক বিভাগ একটি অপরিহার্য সহায়ক বিষয় । কিন্তু কোনো শ্রেণি বা জাতিকে ভাগ করতে হলে আমাদেরকে প্রথমে কোন্ গুণ বা সূত্রের ভিত্তিতে ভাগ করবো, তা মানসিকভাবে ঠিক করে নিতে হয় । সুতরাং যৌক্তিক বিভাগ প্রক্রিয়াটি হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়া ।

যৌক্তিক-বিভাগ অঙ্গগত বিভাগ ও গুণগত বিভাগ থেকে সম্পূর্ণরূপে একটি পৃথক প্রক্রিয়া । কেননা যৌক্তিক বিভাগে বিভাজ্য শ্রেণিটি উপশ্রেণিগুলোর প্রতিটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও অঙ্গগত বিভাগ ও গুণগত বিভাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ৷ যৌক্তিক বিভাজনের ক্ষেত্রে সব সময় একটি মাত্র নীতি বা সূত্র অনুসরণ করতে হয় ।

যৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

তবে এর অর্থ এই নয় যে, কোনো একটি শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক পদকে সব সময় একই নীতি বা সূত্রের ভিত্তিতে বিভাজন করতে হবে। বরং এর অর্থ হলো, একই সাথে একটির অধিক নীতি অনুসরণ করা না গেলেও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নীতি অনুসরণ করা যাবে । যেমন, ‘সভ্যতা’ নীতির ভিত্তিতে ‘মানুষ’ শ্রেণিকে ‘সভ্য মানুষ’ ও ‘অসভ্য মানুষ’- এ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। আবার ‘নৈতিকতা’ গুণটির ভিত্তিতে ‘মানুষ’ শ্রেণিকে ‘নৈতিক মানুষ’ ও ‘অনৈতিক মানুষ’- এ দু’ভাগে ভাগ করা যায় । অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা শ্রেণিকে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি মাত্র নিয়ম বা গুণ অনুসারে যৌক্তিক বিভাগ করা যেতে পারে ।

যৌক্তিক বিভাগের ক্ষেত্রে সব সময় একটি বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় বলে এটি একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া । যৌক্তিক বিভাগ করার সময় এমন একটি গুণ অনুসরণ করতে হয় যা একটি জাতি বা শ্রেণির কিছু অংশে বিদ্যমান এবং কিছু অংশে বিদ্যমান নয়, অথবা এমন একটি নীতি বা সূত্র অনুসরণ করতে হয় যা একটি জাতি বা শ্রেণির কিছু অংশে প্রযোজ্য এবং কিছু অংশে প্রযোজ্য নয় ।

এ বিভাগে বিভক্তমূল, বিভাজক উপশ্রেণি ও সহ-বিভাগ এ তিনটি বিষয় বিদ্যমান । যৌক্তিক বিভাগে যে শ্রেণিবাচক পদটিকে ভাগ করা হয় তাকে বলা হয় ‘বিভক্তমূল’ (totum division) । আবার বিভক্তমূলকে যে বিভিন্ন উপশ্রেণি বা উপজাতিতে ভাগ করা হয় তাকে বলা হয় ‘বিভাজক উপশ্রেণি’ (dividing members)। আর যৌক্তিক বিভাগে যখন একই শ্রেণিকে বিভিন্ন মূলসূত্র অনুসারে বিভিন্ন উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয় তখন তাকে বলা হয় ‘সহ বিভাগ’ (co-division) |

যৌক্তিক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা (লজিক্যাল বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা)

যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে যে সকল সহায়ক প্রক্রিয়া রয়েছে যৌক্তিক বিভাগ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম । যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হিসেবে যৌক্তিক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ নিম্নে তা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো যুক্তিবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হলো যুক্তি । আর যুক্তি পদ্ধতি যথার্থ হওয়ার জন্য যৌক্তিক বিভাগ সম্পর্কিত জ্ঞান অপরিহার্য। কারণ বিশ্বপ্রকৃতির বৈচিত্র্যময়তা ও বিশালতার জন্য এর সব কিছু সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় । এমতাবস্থায় যৌক্তিক বিভাজনের সাহায্যে বিভিন্ন গুণ বা বৈশিষ্ট্যের আলোকে এগুলোকে স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করে খুব সহজেই এগুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা লাভ করা যায় যা যথার্থ যুক্তি গঠনে সহায়তা করে। তাই যুক্তিবিদ্যার আলোচনায় যৌক্তিক বিভাগ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।

যৌক্তিক বিভাগ সব সময় বিভাজিত উপজাতিগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে একটি জাতির অধীনে কতগুলো উপজাতি রয়েছে তা নির্ধারণ করে এবং বিভিন্ন উপজাতির মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য নির্দেশ করে । অনেক ক্ষেত্রেই একটি জাতির বা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত সব কিছু মনে রাখা সম্ভব হয় না। কিন্তু যখন একটি জাতি বা শ্রেণিকে বিভিন্ন গুণ বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এর অন্তর্গত বিভিন্ন উপজাতি বা উপশ্রেণিসমূহে বিভক্ত করা হয় তখন তা সহজেই মনে রাখা যায় । সুতরাং যৌক্তিক বিভাগ আমাদের স্মৃতিশক্তির সহায়ক হিসেবে কাজ করে ।

যৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

এই বিভাগটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া বলে এটি আমাদের মননশীল শক্তি বৃদ্ধি করে । আবার এটি একটি বিশেষ নীতি বা সূত্রের সাহায্যে বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বলে তা যুক্তিবিদ্যার যেকোনো জটিল বিষয় সহজে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয় ।
করতে সক্ষম হয় । যৌক্তিক বিভাগ প্রক্রিয়াটি যে শুধুমাত্র যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক তা কিন্তু নয়, এটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বা গবেষণার ক্ষেত্রেও একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক বিষয় । কারণ প্রতিটি বিজ্ঞানই যৌক্তিক বিভাগ প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করে এর অনুসন্ধেয় বা গবেষণার বিষয়টি প্রকৃতির অন্যান্য বিষয় থেকে পৃথক করে । এর ফলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্য অনেক সহজ হয়।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট, যথার্থ ও সহজ-সরল ধারণা প্রদান করাই যৌক্তিক বিভাগের মূল কাজ । এছাড়াও এ প্রক্রিয়াটি আমাদের বাস্তবমুখী প্রাত্যহিক জীবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের অজান্তেই যৌক্তিক বিভাজন প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের কার্য সম্পাদন করে থাকি। তাই যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হিসেবে যৌক্তিক বিভাগ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক ।

খ) যৌক্তিক বিভাগের সংজ্ঞাঃ

সংজ্ঞা (Definition of Logical Division):

কোন একটি নীতি অনুসরণ করে একটি জাতি বা উচ্চতর শ্রেণীকে তার অন্তর্গত উপজাতি বা নিম্নতর উপশ্রেণী সমূহে মানসিক দিক থেকে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াকে যৌক্তিক বিভাগ বলে। ব্যক্তর্থের বিশ্লেষণই হচ্ছে যৌক্তিক বিভাগের মূলকথা। কোন শ্রেণীকে বিভাগ করার সময় আমরা এমনভাবে একটি সূত্র বা নীতি বেছে নেই যা ঐ শ্রেণীর কারো কারো মধ্যে উপস্থিত দেখা যায়। কিন্তু অন্যদের মধ্যে উপস্থিত দেখা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ: উদ্ভিদ শ্রেণীকে ‘পুষ্প’- এর উপস্থিতির নীতির ভিত্তিতে আমরা যখন তাদেরকে ‘সপুষ্পক’ এবং ‘অপষ্পক’ উপশ্রেণীতে বিভক্ত করি তখন তা হয় যৌক্তিক বিভাগ।

গ) যৌক্তিক বিভাগের নিয়মাবলী:

এ বিভাগ হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। একটি জাতিকে কিভাবে বিভক্ত করা উচিত সে সম্পর্কে যুক্তিবিদ্যা কতগুলো নিয়ম সরবরাহ করে। এসব নিয়ম অনুযায়ী বিভাগ করলে তা যুক্তিবিদ্যাসম্মত বিভাগ বলে গণ্য হবে। আবার নিয়মগুলো না মেনে চললে অনুপপত্তি। যৌক্তিক বিভাগের নিয়মাবলী এবং নিয়মভঙ্গের ফলে যেসব অনুপপত্তির সৃষ্টি হয় সেগুলি সম্পর্কে এখন আমরা আলোচনা করবো।

প্রথম নিয়ম:

যৌক্তিক বিভাগের বেলায় সর্বদা একটি শ্রেণী বা জাতিকে বিভক্ত করতে হবে, কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে নয়। আমরা ‘প্রাণী’ শ্রেণীটিকে যৌক্তিকভাবে বিভক্ত করতে পারি কিন্তু একটা ‘ঘোড়া’ একটা ‘টেবিল’ প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে যৌক্তিকভাবে বিভক্ত করতে পারিনা। কোন ক্ষেত্রে জাতি বা শ্রেণীবাচক পদের পরিবর্তে কোন বিশিষ্ট পদকে বিভাজন করা হলে যেসব অনুপপত্তি ঘটে তা নিচে দেওয়া হলঃ

  • ক. অঙ্গগত বিভাগ (Physical Division)
  • খ. গুণগত বিভাগ (Metaphysical Division)

ক. অঙ্গগত বিভাগ:

কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে তার অঙ্গসমূহে ভাগ করা হলে, সে ক্ষেত্রে অঙ্গগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটবে। যেমন, কোন উদ্ভিদকে তার শাখা ‘কান্ড’ মুল ইত্যাদি অঙ্গে বিভক্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে অঙ্গগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটবে।

খ. গুণগত বিভাগ:

কোন বিশিষ্ট বস্তুকে তার বিভিন্ন গুণে বিভক্ত করাকে গুণগত বিভাগ বলে। যথা- কমলা লেবুকে তার বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ, আকার ইত্যাদিতে কিংবা কাঁচকে ঘনত্ব, ভঙ্গুরতা স্বচ্ছতা ইত্যাদিতে বিভক্ত করা হলে তাকে গুণগত বিভাগ বলে। আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, যৌক্তিক বিভাগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিভাজ্য পদই শ্রেণীবাচক হবে না। বরং বিভক্ত পদ সমূহও শ্রেণীবাচক হবে। এ নিয়ম লঙ্ঘন কালে গুণগত বিভাগ দোষ ঘটবে।

দ্বিতীয় নিয়ম:

যৌক্তিক বিভাগের মূলসূত্র একই সময়ে একটি মাত্র হবে। বিভিন্ন মূলসূত্র অনুসারে একই জাতিবাচক পদের নানা ধরনের বিভাগ হতে পারে। কিন্তু কোন জাতিবাচক পদকে তার অন্তর্গত উপজাতিসমূহ বিভক্ত করতে হলে একই সময়ে একটি মাত্র মূলসূত্র গ্রহন করতে হবে। যেমন- মানুষ জাতিটিকে সভ্যতা, শিক্ষা, সততা ইত্যাদি মূলসূত্র অনুসারে পৃথক পৃথকভাবে যথাক্রমে সভ্য মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, সৎ মানুষ ইত্যাদি উপজাতিতে বিভক্ত করা যাবে।

কিন্তু সব গুণগুলোকে একই সাথে মুলসূত্র হিসাবে গ্রহণ করে মানুষ জাতিকে বিভক্ত করা যাবেনা। এ নিয়মটি লঙ্ঘণ করলে সংকর বিভাগ (Cross Division) অনুপত্তি ঘটবে। যেমন-‘সততা’ ও ‘শিক্ষা’ গুণ দুটিকে একই সাথে মূলসূত্র হিসাবে গ্রহণ করে মানুষ শ্রেণীটিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হলে যৌক্তিক বিভাগটি সংকর বিভাগ দোষে দুষ্ট হবে। কারণ মানুষ শ্রেণীটি ‘সৎ শিক্ষিত মানুষ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এমন মানুষও আছে যারা শিক্ষিত কিন্তু সৎ নয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে যৌক্তিক বিভাগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সৃষ্টি হয়।

তৃতীয় নিয়ম :

বিভক্ত উপশ্রেণীগুলোর একত্রিত ব্যক্ত্যর্থ বিভাজ্য মূল শ্রেণীটির ব্যক্তর্থের সমান হতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে মূল শ্রেণীটিকে যেসব উপশ্রেণীতে ভাগ করা হয় তাদের সকলের একত্রিত ব্যক্তর্থ মূল শ্রেণীটার ব্যক্তর্থের সমান হতে হবে। যেমন- ‘সৎ মানুষ’ ও ‘অসৎ মানুষ’ উপশ্রেণী দুইটির একত্রিত ব্যক্তৰ্থ বিভাজ্য ‘মানুষ’ শ্রেণীর ব্যক্তর্থের সমান। কারণ ‘মানুষ’ পদের ব্যক্তর্থ সকল মানুষের মধ্যে, কিছু মানুষ সৎ এবং কিছু মানুষ অসৎ।

ঘ) যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম লঙ্ঘন জনিত অনুপপত্তিঃ

যৌক্তিক বিভাগের এই তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করলে যেসব অনুপপত্তি ঘটে তা হলঃ

  • ক. অব্যাপক বিভাগ (Too Narrow Division)
  • খ. অতিব্যাপক বিভাগ (Too Wide Division)

উপশ্রেণীগুলোর একত্রিত ব্যক্তর্থ বিভাজ্য শ্রেণীর ব্যক্তর্থের চেয়ে কম হলেই অতি সংকীর্ণ বা অব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। অর্থাৎ আমরা যখন যৌক্তিক বিভাগ করবো তখন কোন উপশ্রেণী বাদ পড়লে এধরণের অনুপপত্তি ঘটে। যথা -ত্রিভুজকে ‘সমবাহু’ ও ‘বিষমবাহু’ এ দুভাগে ভাগ করা হলে অতি সংকীর্ণ বা অব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। কারণ এ বিভাগে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজটি বাদ পড়েছে।

যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম লঙ্ঘন করলে নিম্নোক্ত অনুপপত্তি ঘটে :

সংকর বিভাগ অনুপপত্তি বা পরস্পরাঙ্গী বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of Cross Division or Fallacy of Overlapping Division): যৌক্তিক বিভাজন প্রক্রিয়ার চতুর্থ নিয়মটি হচ্ছে বিভাজন প্রক্রিয়ায় বিভক্ত উপজাতিগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হতে হবে । কিন্তু এ নিয়মটি লঙ্ঘন করে যদি কোনো শ্রেণিবাচক পদকে এমন ভাবে ভাগ করা হয় যে একটি উপশ্রেণি অন্যটির সাথে মিশে যায়, তহলে এতে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে সংকর বিভাগ অনুপপত্তি বা পরস্পরাঙ্গী বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of Cross Division or Fallacy of Overlapping Division) বলে । যেমন, যদি ‘ত্রিভুজ’ শ্রেণিকে ভাগ করতে গিয়ে ‘বাহু’, ‘কোণ’ এ দু’টি নীতিকে বিভাগের সূত্র হিসেবে গ্রহণ করে বিভিন্ন উপজাতিতে ভাগ করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে সংকর বিভাগ অনুপপত্তি বা পরস্পরাঙ্গী বিভাগ অনুপপত্তি ঘটবে। কারণ যে ত্রিভুজটি ‘সমকোণী’ তা ‘বিষমবাহু’ বা ‘সমবাহু’-ও হতে পারে । অর্থাৎ একটি উপশ্রেণি অন্যটির সাথে মিশে যেতে পারে ।

পঞ্চম নিয়ম :

বিভাজ্য শ্রেণি বা জাতির নাম বিভক্ত উপশ্রেণি বা উপজাতিগুলোর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে একই অর্থে প্রযোজ্য হতে হবে । এ নিয়মানুসারে একটি শ্রেণি বা জাতিকে যৌক্তিক বিভাজনের পরও এর নামের কোনো পরিবর্তন হবে না। যেমন, ত্রিভুজকে যদি ‘সমবাহু’, ‘বিষমবাহু’ ও ‘সমদ্বিবাহু’-এ তিন ভাগে ভাগ করা হয় তাহলে এ তিনটির ওপরই বিভাজ্য পদ ‘ত্রিভুজ’ কথাটি প্রযোজ্য হয় । যৌক্তিক বিভাগের এ নিয়মটি মূলত তৃতীয় নিয়ম থেকে অনুসৃত হয়েছে ।

কারণ যৌক্তিক বিভাজনের পর যদি এমন কোনো উপশ্রেণি পাওয়া যায় যার ওপর বিভাজ্য শ্রেণির নাম প্রযোজ্য নয়, তাহলে উপশ্রেণিসমূহের ব্যক্ত্যর্থের যোগফল বিভাজ্য শ্রেণির ব্যক্ত্যর্থের যোগফলের সমান হবে না। তাই কোনো ক্ষেত্রে একটি পদকে বিভক্ত করতে গিয়ে যদি দেখা যায় যে, বিভাজ্য পদের নাম বিভক্ত পদসমূহের ওপর প্রযোজ্য হয় না, তাহলে সেক্ষেত্রে অনুপপত্তি ঘটবে । যৌক্তিক বিভাগের এ নিয়মটি লঙ্ঘন করলে নিম্নোক্ত অনুপপত্তি ঘটে।

যৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

(ক) অঙ্গগত বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of Physical Division) : বিভাজন প্রক্রিয়ায় যখন কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে এর বিভিন্ন অংশে ভাগ করা হয় তখন এক্ষেত্রে বিভাজ্য পদটির নাম বিভাজিত অংশসমূহের কোনোটির ওপর প্রযোজ্য হয় না। এমতাবস্থায় যে অনুপপত্তির সৃষ্টি হয় তাকে অঙ্গগত বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of physical division) বলে । যেমন, একটি গাছকে এর মূল, কান্ড, শাখা ইত্যাদি অংশে ভাগ করা ।

(খ) গুণগত বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of Metaphysical Division) : বিভাজন প্রক্রিয়ায় যখন কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে এর বিভিন্ন গুণের ভিত্তিতে ভাগ করা হয় তখন এক্ষেত্রে বিভাজ্য পদটির নাম বিভাজিত গুণসমূহের কোনোটির ওপর প্রযোজ্য হয় না । এমতাবস্থায় যে অনুপপত্তির সৃষ্টি হয় তাকে গুণগত বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of Metaphysical Division) বলে । যেমন, একটি আপেলকে এর বিভিন্ন রং, আকার, গন্ধ, স্বাদ ইত্যাদি গুণে ভাগ করা ।

ষষ্ঠ নিয়ম :

ক্রমিক বিভাগে বিভাজ্য শ্রেণি বা জাতিকে এর নিকটতম উপশ্রেণি বা উপজাতিতে ভাগ করতে হবে, মধ্যবর্তী কোনো স্তর বাদ দেয়া যাবে না। বস্তুত ক্রমিক বিভাগে অনেকগুলো ধাপ বা স্তর থাকে এবং এ ধাপ বা স্তরগুলোর কোনো একটিকেও বাদ দেয়া যায় না। অর্থাৎ যৌক্তিক বিভাগের এ নিয়মানুসারে বিভাগ প্রক্রিয়াকে প্রতিটি স্তর অনুসরণ করেই অগ্রসর হতে হয় । যেমন, ‘প্রাণি’ পদটির ক্রমিক বিভাজন করতে গিয়ে যদি প্রথমে একে ‘মানুষ’ ও ‘অন্যান্য প্রাণি’ এরপর ‘মানুষ’ পদটিকে ‘সভ্য মানুষ’ ও ‘অসভ্য মানুষ’ পদে বিভাজন করা হয় তাহলে তা হবে ক্রমিক বিভাজন । যৌক্তিক বিভাগের এ নিয়মটি লঙ্ঘন করলে নিম্নোক্ত অনুপপত্তি ঘটে :

উল্লম্ফন বিভাগ অনুপপত্তি (লিপ দ্বারা বিভাগের বিভ্রান্তি)

‘অসভ্য মানুষ’ পদে বিভাজন করা হয় তাহলে তা হবে ক্রমিক বিভাজন। যৌক্তিক বিভাগের এ নিয়মটি লঙ্ঘন করলে নিম্নোক্ত অনুপপত্তি ঘটে :

ক্রমিক বিভাগে বিভাজ্য শ্রেণি বা জাতিকে এর নিকটতম উপশ্রেণি বা উপজাতিতে ভাগ না করে যদি মধ্যবর্তী কোনো স্তর বাদ দেয়া হয় তাহলে এতে যে অনুপপত্তি ঘটে তাকে উল্লম্ফন বিভাগ অনুপপত্তি (Fallacy of Division by Leap) বলে । যেমন, ‘প্রাণি’ পদটির ক্রমিক বিভাজন করতে গিয়ে যদি প্রথমেই একে ‘সভ্য মানুষ’ ও ‘অসভ্য মানুষ’ পদে বিভাজন করা হয় তাহলে তা হবে উল্লম্ফন বিভাগ অনুপপত্তি । কারণ এক্ষেত্রে মধ্যবর্তী স্তর ‘মানুষ’ ও ‘অন্যান্য প্রাণি’ বাদ পড়েছে ।

এই ছিল তোমাদের জন্য প্রণীত এইচএসসি ২০২২ সপ্তম সপ্তাহের যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর/ সমাধানযৌক্তিক বিভাগ বনাম অনুপপত্তি : ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।

[ninja_tables id=”11335″]

আরো দেখুন-

প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লে-স্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ